বাড়ছে চলাচল, ভাঙছে সামাজিক দূরত্ব
করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯) সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান রয়েছে সাধারণ ছুটি। তবে জরুরি প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। ফলে প্রতিনিয়তই রাস্তায় মানুষের চলাচল বৃদ্ধি পাচ্ছে, বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। এতে করোনা পরিস্থিতি আরো অবনতির শঙ্কা বিরাজ করছে, বাড়ছে আতঙ্ক।
কুড়িগ্রামে করোনায় আরো একজন শনাক্ত
দেশে সর্বোশেষ নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন ৫৪৯ জন। এটি এক দিনে সর্বোচ্চ। এর মধ্য দিয়ে দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
মঙ্গলবার রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন বাজারে বেড়েছে বেকারের সংখ্যা। মানুষের চলচলের সাথে সাথে বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে নিত্যপণ্যের দোকানগুলোতে বাড়তে থাকে ভিড়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হলেও ক্রেতা বিক্রেতা কেউ মানছেনা।
সকাল থেকেই রাজধানীর নিউমার্কেট কাচা বাজার এলাকায় মানুষের ভিড়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাজার করতে আসছেন মানুষ। সেখানে কথা হয় গৃহিনী আরিফা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, প্রতি রমজানের আগেই বাজার করে রাখি। তবে এবার লকডাউনের আগে বেশি করে বাজার করে রাখায় রমজানের আগে বাজারের প্রয়োজন হয়নি। তবে সামনের অবস্থা বিবেচনা করে আরো কিছু টুকিটাকি কেনাকাটা করে নিলাম।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, চেষ্টা করছি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার। তবে বাজারের যে অবস্থা সেটা কতক্ষণ মেনে চলা যাবে সেটা বলতে পারবো না।
একই অবস্থা কাওরান বাজার, হাতিরপুল, যাত্রাবাড়িসহ বড় বড় বাজারে। প্রত্যেক জায়গাতে মানুষের ভিড়। কমছে সচেতনতা, ভেঙে পড়েছে সামাজিক দূরত্ব।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে যান চলাচল। ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি বেড়েছে রিক্সা ও সিএনজির সংখ্যা। রাস্তায় দেখা মিলছে কিছু চুক্তিভিত্তিক বাইক।
মহাখালী ও গুলশান এলাকায় প্রাইভেট কার, ট্রাক-পিকআপ, অটোরিকশা ও রিকশার সরব উপস্থিতি ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিক উত্তর বিভাগের (মহাখালী জোন) এক কর্মকর্তা বলেন, যেতেতু বেশ কিছু অফিস আদালত খুলেছে সেহেতু যান চলাচল বাড়বে সেটাই স্বাভাবিক। কিছু প্রাইভেট কার, মাইক্রো ও পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাক যাতায়াত করছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ বাইরে যত কম বের হবে ততই সবার জন্য মঙ্গলজনক।
নীতক্ষেত মোড়ে একসঙ্গে বসে ছিল ১০ জনেরও বেশি মানুষ। তাদের বেশির ভাগই আবার নারী। সেলিনা খাতুন নামের তাদের একজন জানান, স্বামী রিকশা চালান। তবে আগের মতো আয়-রোজগার নেই। তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করলেও এখন বন্ধ। এই মোড়ে অনেকেই সাহায্য নিয়ে আসে। আগেও তিনি এখান থেকে সাহায্য পেয়েছি। তাই আজও বসে আছি।
সার্বিক বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক এক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়েই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে জরুরি হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। এটি ক্রেতা–বিক্রেতা বা জনসাধারণ সবাইকে মানতে হবে, মানাতে হবে। আর তা নিশ্চিত করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সিটি করপোরেশন। বাজারে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা না গেলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে।